free tracking

My Blog

My WordPress Blog

মাগুরার সেই শিশুটির পরিবারের বর্তমান অবস্থা!

মাগুরার আট বছর বয়সী সেই শিশুটি প্রায় আট দিন ধরে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে হার মেনেছে। তার মৃত্যুর পর থেকেই পরিবারটি শোকের মধ্যে ডুবে আছে। প্রতিদিন বিভিন্ন মতের ও দলের মানুষ তাদের বাড়িতে এসে শিশুটির বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। কেউ কেউ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

রাজনৈতিক দলের নেতাদের সমবেদনা ও প্রতিশ্রুতি

গতকাল শনিবার সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলায় শিশুটির বাড়িতে যান। তিনি শিশুটির মৃত্যুর ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি করেন। এছাড়াও বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দেয়। তারা দাবি করেন, ধর্ষকদের বিচার ৯০ দিনের মধ্যে নয়, বরং সাত দিনের মধ্যেই করতে হবে।

পরিবারের অবস্থা ও আর্থিক সহায়তা

নিহত শিশুটির মামা ইউসুফ বিশ্বাস জানান, শিশুটির বাবা মস্তিষ্কের এক ধরনের সমস্যায় ভুগছেন। তার সন্তানদের মধ্যে নিহত শিশুটির পাশাপাশি আরও দুটি মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। বড় মেয়েটির বিয়ে হলেও বাকি তিনজন এখনও ছোট। পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ নেই। শিশুটির মা কোনোভাবে সংসারের খরচ চালাতেন। তবে বর্তমানে অনেকেই তাদের আর্থিক সাহায্য করছে।

ইউসুফ বিশ্বাস বলেন, ‘সবাই বিচার চায়, সাহায্য করছে। কিন্তু মেয়েকে তো আর পাব না আমরা।’

পরিবারের মানসিক অবস্থা

শিশুটির ছোট চাচি আঁখি খাতুন, যাঁর বাড়ি মাত্র দুই মিনিট হাঁটা দূরত্বে, জানান, সবাই যে যার সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য করছে এবং দ্রুত বিচার চাইছে। তবে সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হলো শিশুটির বাবা কিছু মনে রাখতে পারেন না। তিনি জানেন না তার মেয়েটি কোথায় গেছে। তিনি মানুষের ভিড় দেখে ভয় পাচ্ছেন এবং যেন শিশুর মতো আচরণ করছেন।

আঁখি খাতুন আরও জানান, ‘শিশুটির বাবা সকালবেলা মাঠ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ডেকে খেতে দিলাম… অবুঝ শিশুর মতো তাকে পালতে হচ্ছে। ঢাকায় আনা-নেওয়া, এত মানুষ, এসব দেখে তিনি আরো বেশি ভয় পাচ্ছেন।’

মামলার পরিস্থিতি ও এলাকার অবস্থা

গত ১৩ মার্চ রাতেই ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার আসামিদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো হয়। এলাকাবাসী এই ঘটনার প্রতিবাদে মোমবাতি প্রজ্বালন করে এবং দোষীদের দ্রুত ফাঁসি কার্যকর করার দাবি জানায়।

মামলার বর্তমান অবস্থা

গত ৮ মার্চ শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলো তার বড় বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুর। তারা পুলিশ হেফাজতে রয়েছে এবং তাদেরকে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানান, ধর্ষণ ও হত্যা সংশ্লিষ্ট আইনে যত দ্রুত সম্ভব চার্জশিট দেওয়া হবে।

এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া

এলাকাবাসী জানায়, এই অঞ্চলে এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। এই ঘটনা পুরো এলাকাকে লজ্জিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। তারা বলেছে, ‘এখানে ধর্ষকের কোনো ঠাঁই হবে না।’

উপসংহার

মাগুরার এই পরিবারটি বর্তমানে চরম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পরিবারের কর্তা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, আর্থিকভাবে তারা খুবই দুর্বল। এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক নেতারা তাদের পাশে দাঁড়ালেও শোক আর বিচারের অপেক্ষা তাদেরকে কুরে কুরে খাচ্ছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো, ঘটনার সঠিক তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *