free tracking

My Blog

My WordPress Blog

পুরুষদের জন্মনিরোধক নিয়ে বড় সুখবর!

পুরুষদের জন্য বিশেষ এক জন্মনিরোধক তৈরির চেষ্টা চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। অবশেষে বিজ্ঞানীদের সেই প্রচেষ্টা সফল হতে যাচ্ছে। এই জন্মনিরোধক পানিতে দ্রবণীয় এক ধরনের হাইড্রোজেল, যা শুক্রাণু নালি ব্লক করে দেয়। তখন পুরুষের শুক্রাণু আর বীর্যের সঙ্গে মিশতে পারে না।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি এই হাইড্রোজেলের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বা পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সফল হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, এই জন্মনিরোধক দুই বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকতে পারে। এতে শরীরের হরমোনে কোনো পরিবর্তন হয় না।

কনডম ও ভ্যাসেকটমির বিকল্প হিসেবে ‘অ্যাডাম’ নামে এই জন্মনিরোধক জেল তৈরি করা হয়েছে। প্রস্তুতকারক কোম্পানি কন্ট্রালাইনের দাবি, হাইড্রোজেলটি নির্দিষ্ট সময় পর শরীরে মিশে যাবে অর্থাৎ বীর্য ও শুক্রাণুর মিলনে বাধা থাকবে না। তখন প্রজনন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে।

প্রথম ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে কন্ট্রালাইন। এতে দেখা গেছে, হাইড্রোজেলটি ২৪ মাস ধরে সফলভাবে শুক্রাণুর পথ আটকাতে পারে। এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া দুজনের বীর্যে কোনো শুক্রাণু পাওয়া যায়নি। তাঁদের শরীরে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়াও দেখা যায়নি।

কন্ট্রালাইনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কেভিন আইজেনফ্র্যাটস বলেন, ‘এটি সত্যিই উৎসাহব্যঞ্জক! কারণ, প্রথম দিন থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল, দুই বছরমেয়াদি পুরুষের জন্মনিরোধক তৈরি করা। সেটি যে সম্ভব, তা প্রথম পরীক্ষার তথ্য-উপাত্তেই প্রমাণিত।’

তিনি আরো বলেন, এই জেল প্রয়োগে খুব সহজ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এই কাজে মাত্র ১০ মিনিটের মতো সময় লাগে। কেবলমাত্র প্রয়োগের স্থানেই অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়।

এরপর শরীরে নির্দিষ্ট স্থানে ছোট সার্জারির মাধ্যমে শুক্রাণু নালী বের করে আনা হয়। সেখানে ইনজেকশনের মাধ্যমে এই হাইড্রোজেল পুশ করা হয়। তারপর শুক্রাণু নালী যথাস্থানে রেখে কাটা স্থান সেলাইয়ের মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

শুক্রাণু নালি ব্লক করার মাধ্যমে কাজ করে পুরুষের জন্য এমন জন্মনিরোধক তৈরির চেষ্টা এই প্রথম নয়। আগেরগুলোতে এমন উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে যা শরীরে মিশে যেতে পারে না। আইজেনফ্র্যাটস বলেন, ওই ইমপ্লান্টগুলো অপসারণের পর পুরুষের উর্বরতা ফিরে আসার তথ্য-উপাত্ত তেমন মেলে না। পাশাপাশি সেগুলো শুক্রাণু নালিতে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে এবং স্থায়ী বন্ধ্যত্বের কারণ হতে পারে বলেও উদ্বেগ ছিল।

‘অ্যাডামের’ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল এখনো কোনো পিয়ার-রিভিউড জার্নালে প্রকাশিত হয়নি। আইজেনফ্র্যাটস বলেন, ‘এটিকে অনেকটা পুরুষদের জন্য আইইউডি বা ইন্ট্রা-ইউটেরাইন ডিভাইসের (এক ধরনের প্রতিবন্ধক, যা গর্ভধারণ রোধ করার জন্য মূত্রনালিতে স্থাপন করা হয়) মতো ভাবা যেতে পারে।’ দুই বছর পর পুরুষেরা চাইলে আরেকটি ইমপ্লান্ট নিতে পারবেন বলে তিনি জানান।

কন্ট্রালাইন জানিয়েছে, চলতি বছরের শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়ায় ৩০ থেকে ৫০ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরার হরমোনভিত্তিক পুরুষ গর্ভনিরোধক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রিচার্ড অ্যান্ডারসন এই ফলাফলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এটি আসলে কাজ করে বলে মনে হচ্ছে, খুবই দারুণ!’

তবে অ্যান্ডারসন ও ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর জন ওটলি মনে করেন, ‘অ্যাডাম’ ইমপ্লান্ট কত দিন স্থায়ী হয় তা এখনো স্পষ্ট নয়। এর নেতিবাচক ডেটা প্রকাশের অপেক্ষায় আছেন তিনি।

ওটলি বলেন, ‘অ্যাডাম’ ইমপ্লান্ট পুরুষদের জন্য শক্তিশালী জন্মনিরোধক বিকল্প হলেও এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, বেশিরভাগ পুরুষ পিল, প্যাচ ও ইনজেকশন বা সার্জারি— এই তিনটির মধ্যে সার্জারির চেয়ে পিল বা প্যাচ বেছে নেবেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *