free tracking

My Blog

My WordPress Blog

ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩৫০ রান করার সিস্টেম জানে না বাংলাদেশ

ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩৫০ রানকে একসময় অনেক বড় স্কোর ধরা হতো, কিন্তু আধুনিক ক্রিকেটে এটি একটি স্ট্যান্ডার্ড স্কোর হয়ে উঠেছে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই স্কোর তোলার ক্ষমতা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে। আসলেই কি বাংলাদেশ ৩৫০ রানের অ্যাপ্রোচে ব্যাটিং করতে পারে না? নাকি ব্যাটিং কৌশলে কোনো মৌলিক ভুল রয়েছে?

৩৫০ রানের সঠিক সংজ্ঞা কী?

বেশিরভাগ দর্শক এবং এমনকি অনেক ক্রিকেটারও মনে করেন, ৩৫০ রান করতে হলে শুরু থেকেই চার-ছক্কার ঝড় তুলতে হবে। তবে বাস্তবে বিষয়টি এমন নয়। বড় স্কোর তুলতে হলে শুধু বাউন্ডারির ওপর নির্ভর করলে চলবে না, স্ট্রাইক রোটেশনও গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ হিসেবে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার এক ম্যাচের দিকে তাকানো যায়, যেখানে ইংল্যান্ড ৩৫১ রান করেছিল, যার মধ্যে মাত্র ১৫৪ রান এসেছিল বাউন্ডারি থেকে। বাকি প্রায় ২০০ রান তারা সিঙ্গেলস ও ডাবলসের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছিল।

অস্ট্রেলিয়া এই রান তাড়া করেও ম্যাচটি জিতেছিল, কিন্তু তাদের ইনিংসে ছক্কার সংখ্যা ছিল মাত্র ৯টি। অর্থাৎ, তারা বাউন্ডারির ওপর নির্ভর না করে ধারাবাহিকভাবে রান তুলেছে।

নিউজিল্যান্ডের উদাহরণ ও বাংলাদেশের চিত্র

নিউজিল্যান্ডও একই কৌশলে রান তোলে। পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচে তারা ৩০০-এর বেশি রান করলেও মূলত স্ট্রাইক রোটেশনের ওপর নির্ভর করেছে, ছক্কার ওপর নয়।

এখন বাংলাদেশের দিকে তাকানো যাক। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ম্যাচে বাংলাদেশ পুরো ইনিংসে ১৮১টি ডট বল খেলেছে। এর অর্থ দাঁড়ায়, তারা ৩০ ওভার কোনো রানই করতে পারেনি! অবশিষ্ট ২০ ওভার ১৯.৫ বলের মধ্যে ২৩৮ রান করলেও সেটা মূলত বাউন্ডারির ওপর নির্ভর করেই এসেছে। বাংলাদেশি ব্যাটাররা হয় বাউন্ডারি মারতে পারেন না, নয়তো শুধু ডিফেন্স করে যান। মাঝের পর্যায়ে সিঙ্গেলস বের করার দক্ষতা নেই বললেই চলে।

ব্যাটারদের ভুল এবং ব্যর্থতা

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বারবার একই ভুল করছেন। সাম্প্রতিক ম্যাচগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রায় প্রত্যেক ব্যাটসম্যানই শর্টস খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে তানজিদ তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ—সবাই শর্টস খেলতে গিয়ে উইকেট হারিয়েছেন।

৩৫০ রানের ইনিংস গড়তে হলে ব্যাটিং পরিকল্পনা হতে হবে সঠিক। শুধুমাত্র বাউন্ডারির ওপর নির্ভর করলে হবে না, স্ট্রাইক রোটেশন বাড়াতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বিরাট কোহলির এক সেঞ্চুরির কথা বলা যায়, যেখানে তিনি ৮৫-৯০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করলেও তার রানগুলোর বড় অংশ সিঙ্গেলস থেকে এসেছে।

বাংলাদেশের জন্য করণীয়

বাংলাদেশকে যদি নিয়মিত বড় স্কোর গড়তে হয়, তাহলে নিচের বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে—

ডট বল কমানো: প্রতিটি ইনিংসে কমপক্ষে ৭০-৮০টি ডট বল কমাতে হবে।

স্ট্রাইক রোটেশন বাড়ানো: সিঙ্গেলস-ডাবলসের সংখ্যা বাড়িয়ে মাঝের ওভারগুলোয় চাপ এড়াতে হবে।

সঠিক শট নির্বাচন: অযথা বড় শট খেলার চেয়ে গ্যাপে বল খেলে রান নেওয়া জরুরি।

ব্যাটিং পরিকল্পনা: শুরু থেকে ধীরস্থির ব্যাটিং করে সেট হয়ে পরবর্তীতে গতি বাড়াতে হবে।

আধুনিক ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩৫০ রান করতে গেলে শুধু ছক্কা মারার কৌশল কাজ করবে না। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচের মতো, যেখানে মোট ৭০০ রান হলেও দুই দল মিলে মাত্র ১৫টি ছক্কা মেরেছে। অথচ ক্রিস গেইল একাই এক ইনিংসে তার চেয়ে বেশি ছক্কা মেরেছেন! তাই ওয়ানডে ক্রিকেটে বড় স্কোর গড়তে হলে ব্যাটিংয়ের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটাতে হবে, শুধুমাত্র আগ্রাসী ব্যাটিং করলেই ফল মিলবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *