পণ্যজটের অজুহাতে ৮ এপ্রিল হঠাৎ করেই ভারতের উপর দিয়ে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দেয় নয়া দিল্লি। এই সিদ্ধান্তটি শুধু বাণিজ্যিক নয়, বরং কূটনৈতিক টানাপোড়েনের একটি ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে এমন এক সময়ে এই সিদ্ধান্ত আসে, যখন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছিল আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন। সম্মেলনে বাংলাদেশ তুলে ধরছিল নিজেকে দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ বাণিজ্যিক হাব হিসেবে। ৭ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত এই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ২০০-এর বেশি বিনিয়োগকারীর সামনে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় অবস্থান তুলে ধরার উদ্যোগ ছিল সরকারের।
ঠিক তখনই ভারতের কেন্দ্রীয় শুল্ক বোর্ড ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধের ঘোষণা দিলে প্রশ্ন ওঠে—এই সিদ্ধান্ত আসলে কী কেবল প্রশাসনিক, না কি এর পেছনে রয়েছে কোনো কৌশলগত বার্তা? কেউ কেউ বলছেন, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ‘অঘোষিত’ বার্তা দিয়েছে মোদি সরকার—বাংলাদেশ যেন ভারতের ছায়া ছেড়ে খুব বেশি দূরে না যায়। তবে ভারত সরকারের দাবী, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের নেপাল ও ভুটানের সাথে বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ ভারতের জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন বন্দর ও বিমানবন্দর যে রাজস্ব আয় করত, তা এখন বন্ধ হয়ে যাবে।
এদিকে, বাংলাদেশের কৌশলগত প্রতিক্রিয়াও ছিল তাৎক্ষণিক। সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ভারতের এই সিদ্ধান্তে বিচলিত না হয়ে বাংলাদেশ বিকল্প বাণিজ্য রুট গড়ে তুলছে। চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরের মাধ্যমে নতুন আমদানি-রপ্তানির পথ তৈরি হচ্ছে। আকাশপথেও রপ্তানির সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। ভারতের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বাংলাদেশ এখন চীন, তুরস্ক, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে মনোযোগ দিচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে পাকিস্তানের সঙ্গেও পুনরায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের দরজা খুলেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত হয়তো ভেবেছিল ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে বাংলাদেশকে চাপে ফেলবে, কিন্তু বাস্তবে এর উল্টোটা ঘটেছে। বাংলাদেশ এখন আগের মতো নির্ভরশীল প্রতিবেশী নয়, বরং শক্তিশালী কূটনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে নিজের অবস্থান তুলে ধরছে। মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্তের জবাবে বাংলাদেশ কীভাবে এগিয়ে যাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
Leave a Reply