বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করা হয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রজ্ঞাপনে বেনাপোল, ভোমরা, সোনা মসজিদ, বাংলাবান্ধা ও বুড়িমারি স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির অনুমতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে এই নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র স্থলপথের জন্য প্রযোজ্য, সমুদ্রপথে বা অন্যান্য মাধ্যম দিয়ে সুতা আমদানি অব্যাহত থাকবে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের দীর্ঘদিনের দাবি কাজ করেছে, যারা ভারত থেকে আসা সস্তা ও নিম্নমানের সুতার কারণে স্থানীয় শিল্পের ক্ষতির কথা তুলে ধরেছিলেন।
এই ঘটনার আগেই ভারত বাংলাদেশকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল, যার ফলে বাংলাদেশ এখন ভারতীয় শুল্ক বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে না। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, বাংলাদেশের সুতা আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্তটি ভারতের এই পদক্ষেপের একটি জবাবি ব্যবস্থা হতে পারে। বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা দাবি করেন যে ভারতীয় সুতা কলকাতা থেকে গুদামজাত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে এবং তা স্থানীয় বাজারে সস্তা দামে বিক্রি হওয়ায় দেশীয় উৎপাদনকারীরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন। এছাড়া, চীন, তুরস্ক ও উজবেকিস্তানের সুতার দামের সঙ্গে তুলনা করলে ভারতীয় সুতার দাম অস্বাভাবিকভাবে কম, যা বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।
রাজনৈতিক দিক থেকে দেখলে, এই সিদ্ধান্তটি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বর্তমান গতিপ্রকৃতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। বিশেষ করে গত ৫ আগস্টের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের সংগঠনগুলো দাবি করে যে আগের সরকারের সময়ে ভারত থেকে একচেটিয়াভাবে সুতা আমদানি হতো, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা পরিবর্তন হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, এই বাণিজ্যিক সিদ্ধান্তগুলো পরবর্তীতে দুই দেশের মধ্যে বড় ধরনের অর্থনৈতিক বা কূটনৈতিক সংঘাত তৈরি করবে কিনা। ভবিষ্যতে এই ইস্যুটি কীভাবে এগোবে, তা নির্ভর করছে উভয় পক্ষের আলোচনা ও সমঝোতার ওপর।
Leave a Reply