শরীরের রক্তনালীগুলো যেমনভাবে প্রাণঘাতী অঙ্গগুলোর দিকে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে, ঠিক তেমনই এই রক্তনালীতেই যদি কোনো কারণে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়, তা হলে তা হতে পারে ভয়ঙ্কর বিপদের পূর্বাভাস। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই সমস্যাকে ‘ব্লকেজ’ বলা হয়।
কারও ক্ষেত্রে এটি হয় হঠাৎ, আবার কারও ক্ষেত্রে গড়ে ওঠে ধীরে ধীরে। দুই ধরনের ব্লকের উপসর্গও ভিন্ন, আর সেই ভিন্নতা থেকেই সংকেত মেলে শরীরের আসন্ন বিপদের।
চিকিৎসকরা বলছেন, হঠাৎ রক্তনালী ব্লক হলে শরীরে তৈরি হয় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। সাধারণত এটি ঘটে রক্ত জমাট বাঁধার ফলে, যা রক্তপ্রবাহ হঠাৎ থামিয়ে দেয়। এ ধরনের ব্লকে রোগী বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করতে পারেন, যা অনেক সময় বাম হাতে ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট, ঘাম, মাথা ঘোরা, কথা জড়িয়ে যাওয়া, মুখ বেঁকে যাওয়া কিংবা শরীরের এক পাশে অবশ ভাব। এসব উপসর্গ হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ইঙ্গিত বহন করে। সময়মতো হাসপাতালে না নিলে রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে।
অন্যদিকে, ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা ব্লক শরীরকে নীরবে ভেতর থেকে ক্ষয় করতে থাকে। এই ব্লকের ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দেয় ধাপে ধাপে, কখনো স্পষ্ট আবার কখনো অস্পষ্টভাবে। যেমন—হাঁটলে সহজে হাঁপিয়ে যাওয়া, বুকে চাপ লাগা, হাত বা পায়ে ঠান্ডা অনুভব, ত্বকে রঙের পরিবর্তন, অথবা পায়ের পেশিতে ব্যথা ও খিঁচুনি। দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা এই সমস্যাগুলোকে অনেকে সাধারণ ক্লান্তি বা বয়সজনিত সমস্যা বলে এড়িয়ে যান। অথচ এগুলো হতে পারে পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ বা হৃদযন্ত্রের রক্তনালী ব্লকের পূর্বাভাস।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্তনালী ব্লকের পেছনে প্রধান যে কারণগুলো কাজ করে, তার মধ্যে রয়েছে উচ্চ কোলেস্টেরল, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, স্থূলতা এবং অনিয়মিত জীবনযাপন। সময়মতো শনাক্ত না হলে এই ব্লক বাড়তে বাড়তে একসময় বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
পরীক্ষা ও চিকিৎসার দিক থেকেও দুই ধরনের ব্লকের পদ্ধতি আলাদা। হঠাৎ ব্লকের ক্ষেত্রে জরুরি চিকিৎসা যেমন এনজিওপ্লাস্টি বা স্টেন্ট বসানোর প্রয়োজন হয়, ধীরে ব্লকের ক্ষেত্রে রোগীকে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ওষুধ, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও ব্যায়ামের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে উভয় ক্ষেত্রেই প্রথম শর্ত—উপসর্গ চিনে তা অবহেলা না করা।
চিকিৎসকরা মনে করেন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, নিয়ন্ত্রিত জীবনধারা ও সচেতনতা—এই তিনটি উপায়েই রক্তনালীর ব্লক প্রতিরোধ করা সম্ভব। শরীর যখন সংকেত দিচ্ছে, তখন তা না শোনা মানেই বিপদকে ডাক দেওয়া।
Leave a Reply