free tracking

My Blog

My WordPress Blog

কম খরচে দুটি ওষুধ একসঙ্গে সেবন করলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমতে পারে!

একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, হার্ট অ্যাটাকের পর খুব শুরুর দিকেই দুটি সাধারণ, সাশ্রয়ী মূল্যের ওষুধ একসঙ্গে সেবন করলে তা জীবনরক্ষাকারী হতে পারে। গবেষকরা বলছেন, এই সমন্বিত ওষুধ থেরাপি ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাকের পর প্রাথমিক চিকিৎসার মানদণ্ড হওয়া উচিত।

সুইডেনের গবেষণাটি ‘Journal of the American College of Cardiology’-এর এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা গেছে, যারা হার্ট অ্যাটাকের ১২ সপ্তাহের মধ্যে স্ট্যাটিনের সঙ্গে ইজেটিমাইব (ব্র্যান্ড নাম: জেটিয়া) সেবন করেছেন, তাদের হৃদ্‌রোগ-সংক্রান্ত জটিলতা ও মৃত্যুর হার কমেছে। যারা দেরিতে শুরু করেছেন বা ইজেটিমাইব গ্রহণই করেননি, তাদের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি ছিল।

ইজেটিমাইব কীভাবে কাজ করে?

ইজেটিমাইব শরীরের ক্ষুদ্রান্ত থেকে খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল শোষণ হওয়া কমিয়ে দেয়। এটি এমন রোগীদের জন্য উপযোগী, যারা স্ট্যাটিন সহ্য করতে পারেন না, অথবা যাদের ক্ষেত্রে স্ট্যাটিনের একক প্রয়োগ যথেষ্ট কার্যকর হয় না। এটি স্ট্যাটিনের মতো যকৃতের কোলেস্টেরল উৎপাদন কমায় না, বরং এক ভিন্ন পদ্ধতিতে কাজ করে।

গবেষণার মূল ফলাফল

২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে সুইডেনের SWEDEHEART রেজিস্ট্রির মাধ্যমে ৩৫ হাজারের বেশি হার্ট অ্যাটাক রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। তাদের তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়:

  • যারা হার্ট অ্যাটাকের ১২ সপ্তাহের মধ্যে ইজেটিমাইব শুরু করেছেন
  • যারা ১৩ সপ্তাহ থেকে ১৬ মাস পরে শুরু করেছেন
  • যারা ইজেটিমাইব নেননি

উন্নত পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি ব্যবহার করে গবেষকরা দেখেন, যারা দ্রুত ইজেটিমাইব শুরু করেছেন, তাদের মারাত্মক হৃদরোগজনিত ঘটনা (যেমন মৃত্যু, দ্বিতীয় হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক) হওয়ার হার কম ছিল।

প্রথম বছরের মধ্যেই, প্রতি ১০০ জনে মারাত্মক হৃদরোগের হার ছিল:

  • দ্রুত শুরুকারীদের মধ্যে: ১.৭৯
  • দেরিতে শুরুকারীদের মধ্যে: ২.৫৮
  • যারা নেননি, তাদের মধ্যে: ৪.০৩

তিন বছরের শেষে দেখা যায়, যারা ইজেটিমাইব নেননি, তাদের ঝুঁকি ছিল ২৯% বেশি। পাশাপাশি, দ্রুত ইজেটিমাইব গ্রহণকারী রোগীদের মধ্যে এলডিএল কোলেস্টেরলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হারও বেশি ছিল।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

ড. অরুণ মানমাধন, কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, জানান: “এই গবেষণা আরও একবার প্রমাণ করে যে, যারা একবার হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের শিকার হয়েছেন, তাদের কোলেস্টেরল মাত্রা আগ্রাসীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন — যত দ্রুত সম্ভব।”

তিনি বলেন, “দ্রুত ও কার্যকরভাবে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করলে ভবিষ্যতে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।”

শুধুই ওষুধ নয়, জীবনযাপনও গুরুত্বপূর্ণ

ড. মার্কিয়া নিকোলস, CDC-স্বীকৃত লাইফস্টাইল কোচ, বলেন: “চলেস্টেরলকে শত্রু ভাবার দরকার নেই। এটি শরীরের প্রতিক্রিয়া মাত্র। শরীরের ক্ষত সারাতেই কোলেস্টেরল বাড়ে।”

তার মতে, আসল সমস্যা হল দেহে দীর্ঘমেয়াদি inflammation বা প্রদাহ, যা অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত চিনির গ্রহণ, স্ট্রেস ও বিষাক্ত উপাদানের কারণে বাড়তে পারে।

“চলেস্টেরল আসলে দেহের ‘ফায়ারফাইটার’,” তিনি বলেন। “প্রথমে আগুন লাগে — প্রদাহের কারণে। তারপর কোলেস্টেরল আসে তা নেভাতে।”

তাই কেবল কোলেস্টেরল কমালেই হবে না। ড. নিকোলস পরামর্শ দেন:

  • ভিটামিন ডি, ম্যাগনেসিয়াম, ওমেগা-৩ ইত্যাদি পুষ্টির মাত্রা পরীক্ষা করুন
  • সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিন, হোমোসিস্টেইন, ইনসুলিন ইত্যাদি প্রদাহের চিহ্ন পরীক্ষায় রাখুন
  • স্ট্রেস, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য ও হজম সমস্যাগুলো খুঁজে বের করুন

তিনি বলেন, “মূল কারণ না সমাধান করলে কেবল ওষুধে সমস্যা দূর হবে না।”

হার্ট অ্যাটাকের পরে সময়ের গুরুত্ব অনেক। দ্রুত সঠিক ওষুধ এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে দ্বিতীয় হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব। এই গবেষণা চিকিৎসা নীতিমালায় পরিবর্তন আনার আহ্বান জানাচ্ছে — যাতে দ্রুত ও যৌথ ওষুধ প্রয়োগকে স্ট্যান্ডার্ড অফ কেয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সূত্র: https://www.healthline.com/health-news/combination-low-cost-drugs-heart-attack-prevention#What-can-patients-do-beyond-cholesterol-lowering-drugs

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *