ব্যথা, খিল ধরা কিংবা আঙুলে ঘা এসব উপসর্গই হতে পারে মারাত্মক বিপদের পূর্বাভাস।বর্তমানে এক ধরনের রোগ নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে, যা অনেক সময় হঠাৎ করে ধরা পড়ে এবং গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সেটি হলো পায়ের রক্তনালিতে ব্লক। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন এই সমস্যাটি প্রায় ‘মহামারির পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। প্রাথমিকভাবে সাধারণ ব্যথা বা হালকা ঘা বলে মনে হলেও, বিষয়টি যে কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, তা অনেকেই বুঝতে পারেন না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “দেখা যায় একজন মানুষ ঠিকঠাক হাঁটছেন, কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু ধীরে ধীরে হয়তো ১৫ মিনিট হাঁটার পর তার হাঁটুর নিচের মাংসপেশিতে ব্যথা শুরু হয়। রোগী বলেন ‘খিল ধরে গেছে’। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা কমে আসে। পরে দেখা যায়, ওই সময়সীমা কমে আসছে,১৫ মিনিট থেকে ১০, তারপর ৫ মিনিট, শেষে সামান্য হাঁটলেই তীব্র ব্যথা হয়।”
এরপর শুরু হয় আরেক দফার উপসর্গ। আঙুলে ঘা দেখা দেয়। অনেকেই প্রথমে বিষয়টি গা করেন না, নিজের মতো করে ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে নেন। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই ঘা শুকায় না, বরং পচন ধরে। অবশেষে চিকিৎসকের কাছে গেলে জানা যায় রক্তনালিতে ব্লক হয়ে গেছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে পা কাটতে পর্যন্ত হতে হয়।
সব সময় বার্জারস ডিজিজ নয়, হতে পারে সাধারণ রক্তনালির ব্লক
পায়ের ব্যথা বা আঙুলে ঘা মানেই বার্জারস ডিজিজ (Buerger’s Disease) নয়। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ১০০ জন রোগীর মধ্যে ৯৭-৯৮ জনেরই সমস্যাটি বার্জারস নয়, বরং সাধারণ রক্তনালির ব্লক। এটি চিকিৎসাযোগ্য রোগ। সঠিক সময়ে ধরা পড়লে অনেক ক্ষেত্রেই সারিয়ে তোলা সম্ভব।
ব্লক শুরু হয় গর্ভকাল থেকেই, সময়ের সঙ্গে বাড়ে ঝুঁকি
চিকিৎসকদের মতে, “রক্তনালিতে ব্লক হওয়ার প্রক্রিয়াটা শরীরে জন্ম থেকেই শুরু হয়। শরীরের প্রতিটি রক্তনালিতেই কোনো না কোনোভাবে হালকা ব্লক থাকতে পারে, যা স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় যখন এই ব্লকটি অতিমাত্রায় বড় হয়ে যায়।” প্রথম লক্ষণ হয় হাঁটার কিছুক্ষণ পর ব্যথা, যা বিশ্রামে কমে আসে। এক সময় বিশ্রামেও ব্যথা থাকে, তারপর ঘা হয়ে যায়, যা অ্যান্টিবায়োটিক বা সাধারণ ড্রেসিংয়ে সারে না।
এই অবস্থায় অনেক সময় শেষ পরিণতি দাঁড়ায় পা কেটে ফেলার সিদ্ধান্তে।
ঝুঁকিপূর্ণ কারা?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “ধূমপানকারী, অনিয়মিত জীবনযাপন করা, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না, যাদের বংশগতভাবে রক্তে চর্বি জমার প্রবণতা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি।”
এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এবং অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপও রক্তনালির ব্লকের একটি বড় কারণ। তবে ডায়াবেটিস বা প্রেসার থাকলেই যে ঝুঁকি বেশি, তা নয়।এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে তা ঝুঁকি কমায়।
আপনার হাঁটতে গেলে ব্যথা হচ্ছে, আঙুলে ঘা শুকাচ্ছে না বা ছোটখাটো ইনফেকশন দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।তাহলে সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ, সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যেতে পারে যেখানে চিকিৎসার বিকল্প হয়ে উঠবে কেবল অস্ত্রোপচার।
Leave a Reply