আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, আইনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষেধাজ্ঞার দাবিটি দীর্ঘদিন ধরেই তারা তুলে আসছিলেন। এখন সেই দাবি বাস্তবায়নের পথে সরকার হাঁটছে।
শনিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। ভার্চুয়ালি বৈঠকে যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে নেতারা সিদ্ধান্ত নেন, আদালতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগে দল হিসেবে বিএনপি সমর্থন জানাবে।
বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “আওয়ামী লীগের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে—এটা স্পষ্ট। কিন্তু বিচার কবে শেষ হবে, তা বলা হয়নি। যদি জনগণ কিংবা ছাত্ররা বলে, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনও হবে না, তখন দেশের পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটি ভাববার বিষয়।”
তিনি আরও বলেন, “সরকার যদি নির্বাচন নিয়ে দ্রুত ও স্পষ্ট অবস্থান না নেয়, তাহলে বিভ্রান্তি ও অস্থিরতা আরও বাড়বে।”
এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি লিখিতভাবে দাবি করেছিল, ১৯৭১ সালের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে আওয়ামী লীগকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত শুক্রবার বলেন, “সরকার চাইলে আইনের আওতায় এনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারে।”
শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভায় আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে, যার মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক দল ও তার সহযোগী সংগঠনকে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হবে।
এদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কয়েকটি দল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বিএনপি সরাসরি এই আন্দোলনে না থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
বিএনপির নেতাদের অনেকে মনে করছেন, এনসিপি ও সরকারের ভূমিকা অনেকটা ‘ফ্রেন্ডলি ম্যাচ’-এর মতো। কারণ, এনসিপি সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় গঠিত দল বলেই পরিচিত।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিএনপি তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আজ (রবিবার) জানাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Leave a Reply