বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়া এক উত্তপ্ত পরিস্থিতির মুখোমুখি। পারমাণবিক শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা গোটা অঞ্চলের জন্য নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। দুই দেশের মধ্যে বিরতি প্রস্তাব কার্যকর হওয়ার আগে পর্যন্ত দেখা গেছে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রের প্রদর্শনী—ডগফাইটে ৪.৫ জেনারেশনের যুদ্ধবিমান, হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র, এমনকি লক্ষ্যভেদী ড্রোন হামলাও চালানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেরও তার সামরিক সক্ষমতা পুনর্মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। শান্তিকামী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ বরাবরই জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এসেছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার জটিল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পূর্ণ অধিকার বাংলাদেশের রয়েছে।
বিশ্বজুড়ে চলমান সংঘাত, যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন, আজারবাইজান-আর্মেনিয়া কিংবা ভারত-পাকিস্তান সংকট থেকে স্পষ্ট যে, মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান ও আক্রমণাত্মক ড্রোন আধুনিক যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশও প্রতিরক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
বর্তমানে প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে চীন ও তুরস্ক।
চীন ও তুরস্কের সহযোগিতা
ওয়ারপাওয়ার বাংলাদেশ ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কাছে ২১২টি বিমান রয়েছে, যার মধ্যে যুদ্ধবিমান ৪৪টি। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স ২০২৪ অনুযায়ী, সামরিক শক্তির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৭তম, যেখানে গত বছর এটি ছিল ৪০তম।
বাংলাদেশ বর্তমানে চীন থেকে ৪.৫ জেনারেশনের যুদ্ধবিমান ‘জেটএনসি’ সংগ্রহের ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এই যুদ্ধবিমানই পাকিস্তান ৭ মে ভারতীয় রাফায়েল ভূপাতিত করতে ব্যবহারের দাবি করেছে। প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক চীন সফরের সময় তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের সূত্রে এমন সম্ভাবনার ইঙ্গিত মিলেছে।
এছাড়া তুরস্ক থেকেও বাংলাদেশ এরই মধ্যে বাইরাকতার টিবি-২ ড্রোন সংগ্রহ করেছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। পাশাপাশি তুরস্কের বিখ্যাত আকিঞ্জি ড্রোন, হালকা ট্যাংক এবং মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম (TGR-230 ও TGR-300) সংগ্রহের দিকেও নজর দিচ্ছে বাংলাদেশ।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
সম্প্রতি তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেছে, যেখানে প্রতিরক্ষা শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়। তুরস্কের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে শুধু টেক্সটাইল নয়, প্রতিরক্ষা শিল্পেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের জন্য কম খরচে চীনা জে-১০ যুদ্ধবিমান, এইচকিউ-৯ এর সমতুল্য আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, তুরস্কের আকিঞ্জি ড্রোন এবং কার্যকর লাইট ট্যাংক ও এমএলআরএস মজুদ বাড়ানো বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
Leave a Reply