বড় ম্যাচের মঞ্চে বিরাট কোহলি যেন এক নির্ভরতার নাম। পাকিস্তানের বিপক্ষে দুবাইয়ের মন্থর উইকেটেও তিনি দেখিয়ে দিলেন, ধৈর্য আর বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিং দিয়েই কঠিন পরিস্থিতি জয় করা যায়। ৩৬ বছর বয়সেও তার ব্যাটিং দক্ষতায় নেই কোনো ক্ষয়। বরং আরও ক্ষুরধার। সেই ধারেই এদিন তিনি তুলে নিলেন ওয়ানডেতে ৫১তম এবং আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ৮২তম শতক। তবে তার ইনিংসটি শেষ হয়ে যেতে পারত মাত্র ৪১ রানেই—যদি না পাকিস্তান তাদের চিরচেনা খামখেয়ালিপনার পরিচয় দিত!
কোহলির রান তখন ৪১। এক রান নিয়ে তিনি নিরাপদেই ক্রিজে পৌঁছে যান। কিন্তু এর পরই ঘটে এক বিতর্কিত ঘটনা। ফিল্ডারের ছোঁড়া বলটি মাঝপথেই হাত দিয়ে থামিয়ে দেন কোহলি। অথচ তখনো বল ‘ডেড’ হয়নি, অর্থাৎ পাকিস্তানের সুযোগ ছিল ওভারথ্রো থেকে বাড়তি রান দেওয়ার আশঙ্কা নিয়েও আবেদন করার।
কিন্তু অবাক করার মতো ব্যাপার হলো, পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা কোনো আপিলই করল না! অথচ আইন বলছে, এটি “অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড”—যেখানে ব্যাটার ইচ্ছাকৃতভাবে বল আটকালেই তিনি আউট হবেন।
এই ঘটনা ভারতীয় কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার-কে রীতিমতো বিস্মিত করে। ধারাভাষ্য কক্ষে বসে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই বলে ওঠেন,
“সে হাত দিয়ে বল থামিয়েছে! পাকিস্তান যদি আপিল করত—যা তারা করেনি—তাহলে সে নিশ্চিতভাবে আউট হতো। সেখানে কোনো ফিল্ডার না থাকলেও, মিডউইকেটের খেলোয়াড় ডাইভ দিয়ে ওভারথ্রো থামাতে পারত। কোহলির এমন কিছু করা একদমই প্রয়োজন ছিল না। সে আসলে ভাগ্যবান যে পাকিস্তান কিছুই করেনি!”
ক্রিকেটের আইন ৩৭.৪ অনুযায়ী, খেলার মধ্যে থাকা অবস্থায় কোনো ব্যাটার যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাট বা শরীরের অন্য অংশ দিয়ে বল আটকে দেন, তবে সেটি “অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড” হিসেবে গণ্য হবে এবং তাকে আউট ঘোষণা করা যাবে।
কোহলি হয়তো নিজের অজান্তেই এই ভুল করেছিলেন। তবে ভাগ্য তার সহায় ছিল, কারণ পাকিস্তান আবেদন করল না!
এমন একটি সুযোগ হাতছাড়া করে পাকিস্তান যেন নিজেকেই হারিয়ে ফেলল। কোহলি যদি ৪১ রানেই ফিরতেন, তাহলে ম্যাচের গতি সম্পূর্ণ বদলে যেতে পারত। কিন্তু পাকিস্তান সে সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হলো, আর কোহলি সেটাই ব্যবহার করে ম্যাচ বের করে নিলেন ভারতের জন্য।
শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের এই খামখেয়ালিপনারই চরম খেসারত দিতে হলো। আর বিরাট কোহলি? তিনি আরও একবার প্রমাণ করলেন, কেন তাকে বলা হয় “বড় ম্যাচের রাজা”!
Leave a Reply