free tracking

My Blog

My WordPress Blog

ড. ইউনূসকে নিয়ে অস্বস্তি, তবে নতুন ইস্যুতে অস্থির ভারত

ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলন ও গণবিপ্লবের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। তার দেশ ছেড়ে পলায়নের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। তবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এক মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রতিবেশী ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে তিক্ত অবস্থায়। হাসিনার ভারতে অবস্থান বিরক্তিকর বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে।

বিবিসির আনবারসান ইথিরাজান পরীক্ষা করে দেখছেন বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এখন ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছে। শেখ হাসিনাকে ভারতপন্থী হিসেবে দেখা হতো এবং তার ১৫ বছরের শাসনামলে দুই দেশের মধ্যেই ঘনিষ্ঠ কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিল। তার ক্ষমতায় থাকা সময়টি ভারতের নিরাপত্তার জন্যও ছিল বেশ উপকারী, কারণ তিনি তার দেশ থেকে পরিচালিত কিছু ভারতবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে দমন করেছিলেন এবং কিছু সীমান্ত বিরোধেরও নিষ্পত্তি করেছিলেন।

কিন্তু পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ভারতে হাসিনার অবস্থান, তিনি কত দিন দেশটিতে থাকবেন, সে বিষয়ে কোনো ধরনের স্পষ্টতা না থাকায়, শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য দুই দেশের (বাংলাদেশ ও ভারতের) প্রচেষ্টাকেও জটিল করে তুলছে।

এরই মাঝে, বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক দলের আগমনে অস্থির হয়ে উঠেছে ভারত। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি আত্মপ্রকাশ করেছে। আর এ নতুন দলের আহ্বায়ক করা হয়েছে সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে। আর সদস্য সচিব করা হয়েছে আখতার হোসেনকে। বাংলাদেশের নতুন এই ছাত্র সংগঠন নিয়ে সরব ভারতও।

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ভারতীয় গনমাধ্যম এর প্রতিবেদন অনুসারে,

বাংলাদেশের মাটিতে ভারত এবং পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির কোনও ঠাঁই নেই! নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি বা এনসিপি)-র আত্মপ্রকাশের মঞ্চ থেকে এমনই ঘোষণা করলেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। শুধু তা-ই নয়, তাঁর কথায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের উন্নতির প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ এবং দেশবাসীর স্বার্থকে সামনে রেখে আমরা কাজ করব।’’ নাহিদের দাবি, বাংলাদেশকে নতুন করে নির্মাণ করবে তাঁর দল।

শুক্রবার ঢাকার মানিক মিয়াঁ অ্যাভিনিউয়ের মঞ্চে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি। কোরান, গীতা, বাইবেল পাঠ করে নতুন রাজনৈতিক দলের পথ চলা শুরু হয় বাংলাদেশে। সেই দলের আহ্বায়ক হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে নাহিদকে। তাঁকে সামনে রেখে নতুন দলে ১৫১ জন সদস্যের কমিটির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন দলে মোট শীর্ষ পদের সংখ্যা ১০টি। সেই দলের মঞ্চ থেকেই বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ার আহ্বান জানান নাহিদ। বাংলাদেশের জুলাই আন্দোলনে শহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজের বক্তৃতা শুরু করেন তিনি। তাঁর বক্তৃতার পরতে পরতে ছিল বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা।

ঢাকার মানিক মিয়াঁ অ্যাভিনিউয়ের মঞ্চ থেকে নাহিদ বলেন, ‘‘আমরা সামনের কথা বলতে চাই। ইতিহাস পেরিয়ে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের কথা জানাতে চাই। বাংলাদেশকে কখনওই ভাগ করা যাবে না।’’ নাহিদের বক্তৃতায় জায়গা পেয়েছে প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসনকালে পরাধীনতার কথা। উঠে এসেছে ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা এবং পাকিস্তানের জন্ম। তার পর মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের কথাও নাহিদ তুলে ধরেছেন নিজের বক্তৃতায়।

তার পরই শেখ হাসিনার শাসনকাল নিয়ে সরব হয়েছেন নাহিদ। তাঁর কথায়, ‘‘গত ১৫ বছর দেশে একটি নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল, যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে বেপরোয়া ভাবে ব্যবহার করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে।’’ সেই অরাজকতার পতন ঘটিয়েছে ‘জুলাই বিপ্লব’, দাবি নাহিদের। তাঁর দাবি, এনসিপি হবে একটি গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল। দেশ এবং সমাজে সকল প্রকার বিভেদ ঘুচিয়ে ঐক্যের পরিবেশ তৈরি করাই তাঁদের লক্ষ্য। নাহিদের কথায়, ‘‘আমরা এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ চাই, যেখানে প্রতিশোধের বদলে ন্যায়বিচার এবং পরিবারতন্ত্রের বদলে মেধা ও যোগ্যতার মানদণ্ড প্রতিষ্ঠিত হবে।’’ বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলেও আশাবাদী নাহিদ।

জুলাইয়ের গণ অভ্যুত্থানের জেরে গত ৫ অগস্ট হাসিনার সরকারের পতন হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং তার পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধাক্কায় ক্ষমতাচ্যুত হন হাসিনা। সেই ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন নাহিদ। তাঁর মুখেই সেই সময় শোনা গিয়েছিল ‘তুমি কে, আমি কে, বিকল্প, বিকল্প’ স্লোগানটি। শুক্রবার নাহিদ জানান, সেই বিকল্পের জায়গা থেকেই জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ।

এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ভারতীয় গনমাধ্যম আনন্দবাজার এর প্রতিবেদন অনুসারে, নাহিদদের নতুন দলে ঠাঁই পাচ্ছেন না জামায়াতের প্রাক্তনীরা বলে প্রচার করা হয়।

প্রতিবেদন অনুসারে, ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর অন্যতম সমন্বয়ক তথা অন্তর্বর্তী সরকার থেকে সদ্য পদত্যাগী উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম নতুন দলের আহ্বায়ক হবেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যৌথ উদ্যোগে শুক্রবার বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ঘোষণা হবে। কিন্তু সেই দলের পদপ্রাপ্তি ঘিরে টানাপড়েন এখনও অব্যাহত। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছিল, জামায়াত-ই-ইসলামীর (জামাত নামে যা পরিচিত) শিক্ষার্থী সংগঠন ছাত্র শিবিরের প্রাক্তন নেতাদের অনেকে নতুন দলে পদ পেতে চলেছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সে দেশের সংবাদমাধ্যম প্র থম আলোয় প্রকাশিত খবর জানাচ্ছে, আপাতত নতুন দলে ছাত্র শিবিরের প্রাক্তন নেতাদের ঠাঁই হচ্ছে না।

প্রকাশিত খবরে জানানো হয়েছে, নতুন দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতে জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, দু’টি সংগঠন থেকেই ৫০ শতাংশ করে প্রতিনিধি থাকবেন। ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর অন্যতম সমন্বয়ক তথা অন্তর্বর্তী সরকার থেকে সদ্য পদত্যাগী উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম নতুন দলের আহ্বায়ক হবেন। নতুন দলের সাধারণ সচিব পদে জাতীয় নাগরিক কমিটি সদস্যসচিব আখতার হোসেনকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া মুখ্য সংগঠক এবং মুখপাত্র পদের জন্য মনোনীত হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক, সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লা। সারজিস জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গেও যুক্ত। আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখপাত্র এবং মুখ্য সংগঠকের পাশাপাশি নাহিদদের দলে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব নামে দু’টি পদ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে প্রকাশিত একটি খবরে জানানো হয়েছিল, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে আলি আহসান জোনায়েদ (ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রাক্তন সভাপতি)-এর নাম বিবেচনায় আছে। আর দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব পদে আসতে পারেন জাতীয় নাগরিক কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারি।

কিন্তু জোনায়েদ ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি নতুন দলে যোগ দেবেন না। শুক্রবার বিকেলে রাজধানী ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দলের আত্মপ্রকাশ কর্মসূচিতেও যাবেন না। ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আর এক প্রাক্তন সভাপতি রাফে সালমান রিফাত এবং সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির প্রাক্তন সদস্য আরেফিন মোহাম্মদ হিযবুল্লাহও নতুন দলে থাকছেন না বলে জানা গিয়েছে। হিযবুল্লাহ ইতিমধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির সহ-মুখপাত্রের পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *