বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়ন পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। তারা কেবল দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখার জন্য পরিশ্রমই করছেন না, বরং জীবনযাত্রার মান বাড়াতে এবং সামাজিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। কিন্তু এদের অধিকাংশই যে অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং সম্মান পাচ্ছেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
অর্থনীতির শক্তি, কিন্তু তাদের নিরাপত্তা সংকটে
রেমিট্যান্স যোদ্ধারা নিঃস্বার্থভাবে প্রবাসে গিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করে, দেশ ও পরিবারের জন্য অর্থ পাঠান। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের বিভিন্ন খাতে খরচ হয়, যার ফলে পরিবারের দারিদ্র্য দূর করতে এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে অনেক সহায়তা মিলছে। বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, রেমিট্যান্স আয়ের ৬৩ শতাংশই ব্যয় হয় দৈনন্দিন খরচে, যা পরিবারগুলোর আয় ৮২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ প্রবাসী কর্মী রয়েছেন, যারা ১৭৪টি দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ করছেন। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, মালয়েশিয়া এবং অন্যান্য দেশ থেকে প্রাপ্ত রেমিট্যান্সই দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তি।
অবমূল্যায়ন এবং অবহেলা
যতটা অবদান রাখার পরও, রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের দেশের অভ্যন্তরে অবহেলা এবং নির্যাতনের শিকার হতে হয়। বিমানে বাড়তি খরচ, টিকিটের মূল্যবৃদ্ধি, চিকিৎসা সেবা এবং ভিসা সিস্টেমে দুর্নীতি ছাড়াও তারা যে সামাজিক ও মানসিক অবমূল্যায়নের শিকার হন, তাও উল্লেখযোগ্য। প্রবাসীরা পরিবার ও সমাজের জন্য জীবন বাজি রেখে কাজ করলেও, দেশে ফেরার পর অনেক সময় তাদের যথাযথ মূল্যায়ন পাওয়া যায় না। তাদের অবদান চিরকালীন হলেও সরকার ও প্রশাসনিক নীতিতে তাদের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ কিংবা সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই।
সরকারি সহায়তার অভাব
দুর্গম পরিস্থিতিতে প্রবাসী কর্মীরা প্রাথমিকভাবে সরকারের সহায়তা এবং দূতাবাস থেকে সহযোগিতা পেতে অনেক সময় বাধাগ্রস্ত হন। এছাড়াও প্রবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বিমানবন্দরে তাদের অবহেলা, পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে মানসিক চাপ এবং সামাজিক একাকিত্ব তাদের জীবনকে আরও কঠিন করে তোলে।
সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন
প্রবাসীদের প্রতি এই অবহেলা দূর করতে প্রয়োজন সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ। তাদের নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন এমন পদক্ষেপ যা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা এবং প্রশাসনিক সহায়তার মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করবে। উদাহরণস্বরূপ, প্রবাসীদের লাশ দেশে ফেরানোর খরচ মওকুফ, বিমানে সঠিক সম্মান, এবং তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ এবং সুবিধা প্রদান করা উচিত।
এছাড়া, দেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের অবদানের যথাযথ মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য শ্রম অভিবাসন বিষয়ক নীতিমালাকে সংশোধন এবং পুনর্বিবেচনা করা আবশ্যক। সরকারের এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি সুনির্দিষ্ট নীতির আওতায় কাজ করতে হবে, যাতে বিদেশে কর্মরত প্রবাসীদের সুবিধা বৃদ্ধি এবং তাদের সমস্যা সমাধান করা যায়।
শেষ কথা
আমরা যদি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সম্মান এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারি, তবে তাদের প্রতি আমাদের অবিচার করা হবে। দেশের অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধিতে যারা অবদান রেখেছেন, তাদের প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ আমাদের কর্তব্য। তাদের যন্ত্রণার শেষ করতে এবং দেশে তাদের অবদান যথাযথভাবে মূল্যায়ন করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
Leave a Reply