ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় পশ্চিমা ধাঁচের খাদ্যাভ্যাস — নতুন গবেষণার সন্ধান
উচ্চমাত্রার চর্বি ও ফ্রুক্টোজসমৃদ্ধ পশ্চিমা ধাঁচের খাদ্যাভ্যাস ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে জানিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা হেলথের একদল গবেষক। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, এ ধরনের খাদ্য দেহে গ্লাইকোজেনের মাত্রা বাড়ায়, যা টিউমারের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে পারে।
খাদ্য ও ফুসফুসের ক্যান্সারের নতুন সংযোগ
পূর্বে ফুসফুসের ক্যান্সারকে খাদ্যাভ্যাস-সম্পর্কিত রোগ হিসেবে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তবে নতুন এই গবেষণা সেই প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। প্রধান গবেষক রামন সান, পিএইচডি, বলেন, “লিভার ও প্যানক্রিয়াস ক্যান্সারের সঙ্গে খাদ্যের ভূমিকা বেশ আলোচিত হলেও ফুসফুসের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বিষয়টি প্রায় অবহেলিত ছিল। আমাদের গবেষণা সেই শূন্যতা পূরণ করছে।”
গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল
গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ-চর্বি ও উচ্চ-ফ্রুক্টোজযুক্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে শরীরে গ্লাইকোজেনের মাত্রা বেড়ে যায়। গ্লাইকোজেন হলো এক ধরনের গ্লুকোজ-ভিত্তিক সংরক্ষিত কার্বোহাইড্রেট, যা সাধারণত শক্তির জোগান দেয়। তবে এই গ্লাইকোজেন মাত্রাতিরিক্ত হলে ক্যান্সার কোষগুলো সেটিকে তাদের বৃদ্ধি ও বিস্তারের জন্য ব্যবহার করে।
নেচার মেটাবলিজম জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় আরও দেখা যায়, ইঁদুরদের এমন খাদ্য দেওয়া হলে তাদের শরীরে গ্লাইকোজেনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে এবং ফুসফুসে টিউমারের বৃদ্ধি দ্রুততর হয়। তবে গ্লাইকোজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করলে টিউমারের বৃদ্ধির হার কমে যায়।
গ্লাইকোজেন: শক্তির উৎস নাকি ক্যান্সারের সহায়ক?
গ্লাইকোজেন মূলত লিভার ও পেশিতে সংরক্ষিত থাকে এবং শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। কিন্তু ক্যান্সার কোষগুলো এই গ্লাইকোজেনকে তাদের টিকে থাকা ও দ্রুত বর্ধনের জন্য ব্যবহার করে। বিশেষ করে, বিপাকীয় চাপে থাকা ক্যান্সার কোষেরা গ্লাইকোজেন জমা করে ভবিষ্যতে বেঁচে থাকার জন্য একটি রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করে।
আগের গবেষণাগুলোতে লিভার, স্তন, ওভারি ক্যান্সারের সঙ্গে গ্লাইকোজেন বিপাকক্রিয়ার সংযোগ পাওয়া গিয়েছিল। এবার ফুসফুসের ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রভাব দেখা গেল, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
প্রতিরোধের পথ কী?
গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন, স্বাস্থ্যকর ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস গ্রহণের মাধ্যমে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। বিশেষ করে, উচ্চ-চর্বি ও উচ্চ-ফ্রুক্টোজযুক্ত খাবার কমিয়ে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করলে শরীরের গ্লাইকোজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
এই গবেষণা ভবিষ্যতে ক্যান্সার প্রতিরোধ ও চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়নে নতুন কৌশল ও খাদ্য সংক্রান্ত নির্দেশনা তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Leave a Reply