free tracking

My Blog

My WordPress Blog

স্বর্ণের দাম বাড়বে নাকি কমবে, জানালেন বিশেষজ্ঞরা!

বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম, যা পৌঁছেছে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এর প্রভাবে দেশেও রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে মূল্যবান এই ধাতুটি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুব শিগগিরই বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৫০০ ডলার ও দেশের বাজারে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ টাকা ছাড়াতে পারে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বর্ণের দাম বাড়ায় বেচাকেনা কমে গেছে।

ট্রাম্পের শুল্কারোপের জেরে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাবে অস্থির স্বর্ণের বিশ্ববাজার। এছাড়া বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদা, ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃক সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ডলারের দামের পতন এবং স্বর্ণ-সমর্থিত এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড তহবিলে বর্ধিত প্রবাহও ধাতুটির উত্থানকে ইন্ধন জোগাচ্ছে। যার প্রভাবে এরই মধ্যে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ২০০ ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।

উইজডমট্রির পণ্য কৌশলবিদ নীতেশ শাহ বলেন, ’ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বিপর্যস্ত বিশ্বে স্বর্ণ স্পষ্টতই বিনিয়োগকারীদের পছন্দের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে দেখা হচ্ছে। মার্কিন ডলারের দাম কমেছে এবং মার্কিন ট্রেজারিগুলো ব্যাপকভাবে বিক্রি হচ্ছে, কারণ নির্ভরযোগ্য বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আস্থা কমে গেছে।‘

টেস্টিলাইভের গ্লোবাল ম্যাক্রোর প্রধান ইলিয়া স্পিভাক বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে মার্কিন ডলারের দ্রুত দুর্বলতা স্বর্ণের প্রত্যাবর্তনের প্রধান চালিকাশক্তি বলে মনে হচ্ছে।’

ট্রাডু ডট কমের সিনিয়র বাজার বিশ্লেষক নিকোস জাবোরাস বলেন, ‘স্বর্ণ তার নিরাপদ আশ্রয়স্থলের আকর্ষণ ফিরে পেয়েছে এবং দাম নতুন করে সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।’

আর ক্যাপিটাল ডটকমের আর্থিক বাজার বিশ্লেষক কাইল রোডা বলেন, ‘বিশ্ববাজারে ফের বাড়ছে স্বর্ণের দাম। এখন এটি প্রতি আউন্স ৩ হাজার ৫০০ ডলার ছাড়ানোর অপেক্ষায়।’

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৩৫ দশমিক ৮৯ ডলারে। যা গত সেশনের শুরুতে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২৪৫ দশমিক ২৮ ডলারের পৌঁছেছিল। আর ফিউচার মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ২ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ২৪৪ দশমিক ৬ ডলারে বেচাকেনা হচ্ছে।

বিশ্ববাজারে যখন স্বর্ণের দামের এই হাল, তখন দেশের বাজারেও স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে রেকর্ড দামে। সবশেষ শনিবার (১২ এপ্রিল) দেশের বাজারে সমন্বয় করা দাম। এবার ভরিতে ৪ হাজার ১৮৭ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬৩ হাজার ২১৪ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।

এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৯৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৪১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১০ হাজার ২৭১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি কার্যকর হচ্ছে ১৩ এপ্রিল থেকে।

এ নিয়ে চলতি বছর ২০ বার দেশের বাজারে সমন্বয় করা হলো স্বর্ণের দাম। যেখানে দাম বাড়ানো হয়েছে ১৫ বার, আর কমেছে মাত্র ৫ বার। ২০২৪ সালে দেশের বাজারে মোট ৬২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছিল। যেখানে ৩৫ বার দাম বাড়ানো হয়েছিল, আর কমানো হয়েছিল ২৭ বার।

স্বর্ণের দামের এই ঊর্ধ্বমুখীতায় বেচাকেনা কমে গেছে বলে জানিয়েছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। পুরান ঢাকার তাঁতিবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুরঞ্জন বলেন, ‘ব্র্যান্ডের বড় বড় দোকানগুলোর বিক্রিও সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কমে গেছে। আর মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ীদের অবস্থা তো আরও করুণ। ঊর্ধ্বমুখী এই দাম পুরো স্বর্ণ ব্যবসার জন্যই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’

বাজুস বলছে, বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে দেশেও দাম সমন্বয়ের প্রয়োজন পড়ে। না হলে স্বর্ণ প্রতিবেশী দেশগুলোতে পাচার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান ও বাজুস সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান সময় সংবাদকে বলেন, বিশ্ববাজারে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ওঠানামা করে স্বর্ণের দাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বাজারেও দাম সমন্বয়ের প্রয়োজন পড়ে।

চলমান যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধসহ বেশ কয়েকটি কারণে মূলত বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ট্রাম্পের শুল্কারোপের পর রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছানোর পর হঠাৎ করেই স্বর্ণের দামে বড় পতন হয়েছিল। তবে ট্রাম্প চীন বাদে অন্যান্য দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক ৩ মাসের জন্য স্থগিত করায় ফের বাড়ছে দাম। যা এরই মধ্যে ৩ হাজার ২০০ ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। এছাড়া ফেডের সুদের হার, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও নানা অস্থিরতায় ঊর্ধ্বমুখী স্বর্ণের বাজার।

এ অবস্থা চলমান থাকলে খুব শিগগিরই বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৩০০ ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করবে বলেও জানান মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে মানুষ বিনিয়োগের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন। এ অবস্থা চলমান থাকলে ৩ হাজার ৫০০ ডলার প্রতি আউন্সও অতিক্রম করতে পারে। তবে সেটি নির্ভর করছে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর।

দেশের বাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, চলমান অস্থিরতায় চলতি বছর দেশের বাজারে এখন পর্যন্ত ১৫ বার দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে দাম পৌঁছেছে ১ লাখ ৬৩ হাজারের ওপরে। এ অবস্থা জারি থাকলে চলতি বছর স্বর্ণের ভরি ২ লাখের কাছাকাছি চলে যেতে পারে, আবার ২ লাখ টাকার মাইলফলকও অতিক্রম করতে পারে।

তবে স্বর্ণের দামের ঊর্ধ্বমুখীতায় দেশের বাজারে ৭০-৮০ শতাংশ বেচাকেনা কমে গেছে বলেও জানান তিনি। মাসুদুর রহমান বলেন, দাম বাড়ায় সব দেশেই বেচাবিক্রি কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *