free tracking

My Blog

My WordPress Blog

কেন সীমান্তে রাশিয়ার এস ৪০০ মোতায়ন করলো মোদি?

ভারতের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্য—আসাম, অরুণাচল, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মণিপুর, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের সঙ্গে যুক্ত করা এই মাত্র ২০ কিলোমিটারের সরু করিডোরটিই পরিচিত ‘চিকেন নেক’ নামে।

এই করিডোর ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এর ক্ষুদ্রতম হুমকিও দেশটির নিরাপত্তা নীতিতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। সম্প্রতি এই এলাকায় ভারতের প্রতিরক্ষা তৎপরতা নতুন মাত্রা পেয়েছে—শিলিগুড়ি করিডরে রাশিয়া থেকে আমদানি করা এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে ভারত।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই পদক্ষেপ কি শুধুই প্রতিরক্ষার জন্য? নাকি এর আড়ালে রয়েছে প্রচারণা, অমূলক ভয় এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য?

ভারতের গদি ঘেঁষা লালমনিরহাটে বাংলাদেশের একটি সামরিক বিমানঘাঁটি নির্মাণ ও চীনের কাছ থেকে ৩২টি JF-17 যুদ্ধবিমান কেনার সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা। যদিও এসব তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে, তবুও ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন—বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক হয়তো বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI) এর সামরিক রূপ নিচ্ছে। এই পটভূমিতে ভারত শিলিগুড়িতে এস-৪০০ মোতায়েন ছাড়াও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সড়ক, বিমানঘাঁটি এবং নজরদারির পরিকাঠামো শক্তিশালী করছে।

১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের পর থেকেই শিলিগুড়ি করিডোর ভারতের কাছে একটি কৌশলগত দুঃস্বপ্ন। কারণ এই সরু করিডোরটি যদি কোনোভাবে অবরুদ্ধ হয়, তাহলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও চীনের সীমান্ত ঘেঁষা এই অঞ্চল তাই ভারতের নিরাপত্তা নীতিতে সব সময় শীর্ষে থেকেছে।

বাংলাদেশ কখনো কোনো দেশকে আক্রমণ করেনি। বরং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রতিটি প্রতিরক্ষা পদক্ষেপ ছিল আত্মরক্ষার কৌশল। বাংলাদেশ বরাবরই আঞ্চলিক শান্তি ও সহাবস্থানের পক্ষপাতী।

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক দেশের সার্বভৌমত্ব ও উন্নয়নের স্বার্থে, ভারতের বিরুদ্ধে কোনো শত্রুতার উদ্দেশ্যে নয়। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়ায় এসব তৎপরতা প্রায়ই অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করা হয়।

ভারতের অনেক বিশ্লেষকই এই পরিস্থিতিকে “গদি মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা” বলে আখ্যা দিচ্ছেন। তাদের মতে, চীন ও বাংলাদেশকে হুমকি হিসেবে তুলে ধরে জাতীয়তাবাদী আবেগে রাজনীতিকে চাঙ্গা করা ভারতের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ। এস-৪০০ মোতায়েন, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুকে সামনে এনে জনমতকে প্রভাবিত করার কৌশল—এটি ভারতের জন্য নতুন নয়।

বর্তমান সরকার স্পষ্ট করছে—বাংলাদেশ কারো সঙ্গে শত্রুতা চায় না। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন হবে দেশের স্বার্থে, কিন্তু ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক বন্ধন উপেক্ষা করা অসম্ভব। কিন্তু ভারতের এই অতিরিক্ত সতর্কতা ও গণমাধ্যমের অপপ্রচার বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে অসন্তোষ ও অবিশ্বাস তৈরি করছে।

শিলিগুড়ির সরুপথটি আজো নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে। তবে এই নীরবতার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ ভূরাজনীতির মোড়। ভারতের এস-৪০০, বাংলাদেশের বিমানঘাঁটি, চীনের বিআরআই—সব মিলিয়ে এ যেন এক কৌশলগত দাবার ছক। এখন দেখার বিষয়—এই খেলার পরিণতি হবে সহযোগিতা, না কি সংঘাত।

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=GkKFIMMZLpI&t=46s

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *