অস্ট্রেলিয়ায় এক ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে—এটি হলো দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগ বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD)। বর্তমানে প্রায় ২.৭ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত, কিন্তু তাদের বেশিরভাগই জানেন না যে তারা কিডনির ঝুঁকিতে রয়েছেন।
‘আমি ভাবতাম আমি একদম সুস্থ’
সিডনির বাসিন্দা শালিয়েন্দ্র ত্রিপাঠী, একজন কর্পোরেট কর্মী। ধূমপান বা মদ্যপান না করলেও এবং সুস্থ জীবনযাপন করলেও হঠাৎ করে মাঝে মাঝে মাথা ধরতো তাঁর। তিনি ভেবেছিলেন এটি শুধু কাজের চাপ।
কিন্তু অফিসে বাধ্যতামূলক এক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় জানা যায়, তাঁর কিডনি মাত্র ৫০ শতাংশ কার্যক্ষম। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৪৫। “আমি একদম বিস্মিত হয়েছিলাম। ভাবতেই পারিনি আমার কিডনিতে এত বড় সমস্যা হচ্ছে,” বলেন ত্রিপাঠী।
চমকে দেওয়ার মতো পরিসংখ্যান
অস্ট্রেলিয়ান ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস (ABS) সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে জানিয়েছে, বর্তমানে প্রতি সাতজন প্রাপ্তবয়স্কের একজন এই রোগে আক্রান্ত। ২০১২ সালে এই হার ছিল ১০.৮ শতাংশ, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪.২ শতাংশে।
এর চেয়েও ভয়ানক তথ্য হলো—৯২ শতাংশ আক্রান্ত ব্যক্তি জানেনই না যে তাঁদের কিডনির সমস্যা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের হুঁশিয়ারি
কিডনি হেলথ অস্ট্রেলিয়ার প্রধান ক্রিস ফোর্বস একে “জনস্বাস্থ্য সংকট” হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি জানান, কিডনি রোগ এক সময় মৃত্যুর ১৯তম কারণ ছিল, আর এখন তা উঠে এসেছে নবম স্থানে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে এটি হয়ে উঠতে পারে পঞ্চম প্রধান মৃত্যুর কারণ।
কেন হয় এই রোগ?
ডায়াবেটিস
উচ্চ রক্তচাপ
পরিবারে কিডনি রোগের ইতিহাস
ধূমপান বা অতিরিক্ত ওজন
বয়স বাড়ার সঙ্গে কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হ্রাস
সমাধান: সময়মতো পরীক্ষা
ক্রিস ফোর্বস বলেন, “একটি সাধারণ রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা দিয়েই কিডনির অবস্থা জানা সম্ভব।”
যাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন, তাঁদের প্রতি বছরে অন্তত একবার কিডনি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন তিনি। “এই ছোট্ট একটিই পদক্ষেপ আপনার জীবন বাঁচাতে পারে,” বলেন তিনি।
ত্রিপাঠীর বার্তা: ‘আগেভাগে জানলেই জীবন বাঁচে’
ত্রিপাঠী মনে করেন, সময়মতো ধরা পড়ার কারণেই তিনি এখনো সুস্থভাবে বেঁচে আছেন। খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়াম নিয়ন্ত্রণ করে তিনি এখনো কিডনির ৪০ শতাংশ ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছেন।
“এই রোগ মানেই জীবন শেষ নয়। আগে ধরা পড়লে, আপনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন,” বলে জানান তিনি।
Leave a Reply