সন্তানের সুখের জন্য একজন মা তার নিজের সবকিছু ত্যাগ করেন,এটাই যেন চিরন্তন সত্য। সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে নিজের স্বাদ-আহ্লাদ বিসর্জন দেন একজন মা। কিন্তু টাঙ্গাইলের এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে সেই চিরচেনা মা-সত্তার করুণ বিপরীত চিত্র।
নিজের শখ পূরণ করতে গিয়েই সন্তানের জীবনের সঙ্গে যেন নির্মম প্রহসন করলেন এক মা। ফুটফুটে শিশুটির বয়স মাত্র চার মাস। অথচ এই বয়সেই তাকে বলি হতে হলো মায়ের শখের কাছে।মোবাইল, পায়ের নুপুর, নাকফুল, নতুন কাপড়-চোপড়, বোরখাসহ পছন্দের জিনিস কিনতেই মাত্র ৪৫ হাজার টাকায় সন্তানকে বিক্রি করে দেন তার গর্ভধারিণী মা লাভনী আক্তার।
চার মাস বয়সী সন্তানের ব্যবহৃত জামা হাতে নিয়ে অঝোরে কাঁদছেন বাবা রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, “যে কোনো মূল্যে আমার সন্তানকে ফিরে চাই। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের কঠোর বিচার চাই।”
ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার পন্ডুরা শেওড়াতলা গ্রামে। অভিযুক্ত মা লাভনী আক্তার চলতি মাসের ১২ তারিখে তার শিশুপুত্রকে বিক্রি করে দেন একই জেলার ভুয়াপুর উপজেলার অলুয়া গ্রামের নিঃসন্তান হোসেন আলীর কাছে।
সন্তান বিক্রির টাকা দিয়ে লাভনী আক্তার কেনেন মোবাইল ফোন, পায়ের নুপুরসহ নিজের শখের নানা সামগ্রী। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনায় হতবাক এলাকাবাসী। তারা বলেন, “এই নারী মায়ের নাম কলঙ্কিত করেছেন। তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।”
ঘটনার এক সপ্তাহ পর পুলিশ শিশুসহ অভিযুক্ত মাকে আটক করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে শিশুটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে এবং তাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আইনি প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, “এই ঘটনার তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। অভিযুক্ত মা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।”
“মা” হয়ে সন্তানের মতো অবুঝ প্রাণকে বিক্রির মতো ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে সমাজের প্রতিটি বিবেকবান মানুষকে।সচেতন মহলের মতে, “পরকীয়া, ইন্টারনেটের নেতিবাচক প্রভাব এবং মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় এমন ভয়াবহ ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
Leave a Reply