আপনার হৃদস্পন্দন কি মাঝেমধ্যেই ধীরে আসে? বুক ধড়ফড় করে, মাথা ঘোরে, বা হঠাৎই অজ্ঞান হয়ে যান? এসব উপসর্গ খুব সাধারণ মনে হলেও, এগুলো হতে পারে হৃদপিণ্ডের একটি গুরুতর সমস্যা ‘হার্টব্লক’-এর লক্ষণ।
হার্টব্লক মানে হলো, হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক ইলেকট্রিক সংকেত ঠিকমতো নিচে পৌঁছাচ্ছে না। ফলে হার্ট রক্ত পাম্প করার সময় সঠিক ছন্দ হারিয়ে ফেলে। এতে হৃদস্পন্দন কমে আসে বা কখনও একেবারেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় এটা বুঝতেই পারেন না কেউ, আবার কারও ক্ষেত্রে এটি জীবনঘাতী পরিস্থিতি তৈরি করে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে হার্টব্লককে তিনটি ধাপে ভাগ করা হয়। প্রথম ডিগ্রি ব্লকে সংকেত পৌঁছায় বটে, তবে খুব ধীরে। এতে উপসর্গ নাও দেখা দিতে পারে। দ্বিতীয় ডিগ্রিতে মাঝে মাঝে সংকেত হারিয়ে যায়। বিশেষ করে টাইপ-২ ব্লক তুলনামূলকভাবে বেশি বিপজ্জনক, কারণ এতে একটানা একাধিক বিট মিস হতে পারে। আর তৃতীয় ডিগ্রি হার্টব্লক হলো সবচেয়ে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ, যেখানে হৃদযন্ত্র নিজেই সংকেত তৈরি করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা না নিলে প্রাণহানিও ঘটতে পারে।
এই সমস্যাটি যে কারও হতে পারে, তবে যারা আগে থেকে হৃদরোগে ভুগছেন, যাদের হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস আছে কিংবা বয়সজনিত কারণে হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়েছে,তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। এছাড়া কিছু ওষুধ, থাইরয়েড সমস্যা, অটোইমিউন ডিজঅর্ডার বা জন্মগত হৃদযন্ত্রের গঠনগত ত্রুটিও এর জন্য দায়ী হতে পারে।
হার্টব্লকের প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-বুক ধড়ফড় করা, অল্পতেই ক্লান্তি লাগা, মাথা ঘোরা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া কিংবা হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলা। যেকোনো একটি উপসর্গ নিয়মিত অনুভব করলে দেরি না করে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথম ডিগ্রির হার্টব্লকের জন্য অনেক সময় কোনো ওষুধ বা যন্ত্রের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু দ্বিতীয় বা তৃতীয় ডিগ্রির ক্ষেত্রে অনেক সময় ‘পেসমেকার’ বসানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এটি এক ধরনের ছোট ইলেকট্রনিক ডিভাইস, যা হৃদযন্ত্রকে সঠিক সময়ে সংকেত পাঠিয়ে স্পন্দন বজায় রাখে।
বর্তমানে পেসমেকার প্রযুক্তি অনেকটাই উন্নত ও নিরাপদ। তবে একবার বসানো হলে নিয়মিত ফলোআপ এবং নির্দিষ্ট জীবনযাপন পদ্ধতি মেনে চলাও গুরুত্বপূর্ণ।
হার্টব্লকের ঝুঁকি এড়াতে জীবনধারায় পরিবর্তন আনা সবচেয়ে কার্যকর উপায়। নিয়মিত হাঁটাচলা, ওজন নিয়ন্ত্রণ, সঠিক ডায়েট অনুসরণ, ধূমপান বা অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা এবং পর্যাপ্ত ঘুম হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
শেষ কথা হলো,হার্টব্লক শব্দটা শুনতে ভীতিকর মনে হলেও, সচেতনতা, দ্রুত পরীক্ষা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আপনার শরীর যখন সংকেত দিচ্ছে, তখন তা এড়িয়ে না গিয়ে গুরুত্ব দিন। কারণ একটি সুস্থ হৃদয়ই দিতে পারে আপনাকে দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যকর জীবন।
Leave a Reply