বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং জনস্বার্থ নিশ্চিত করতে গঠিত হয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন। দেশের চিকিৎসা সেবাকে জনবান্ধব ও দুর্নীতিমুক্ত করতে এই কমিশন বেশ কিছু যুগান্তকারী প্রস্তাবনা পেশ করেছে, যা বাস্তবায়ন করা গেলে চিকিৎসাখাতে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সোমবার (৫ মে) সকাল ১১টায় এই স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে। প্রতিবেদনে চিকিৎসকদের ওপর ওষুধ কোম্পানির প্রভাব কমানো এবং অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহারে লাগাম টানতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। কমিশনের সদস্যরা মনে করেন, স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভেতরের অনিয়ম দূর না করা গেলে সাধারণ মানুষ কখনোই মানসম্মত সেবা পাবেন না।
প্রতিবেদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব হলো—ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রতিনিধিরা আর কোনো হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে পারবেন না। তাদেরকে ই-মেইলের মাধ্যমে ওষুধের তথ্য জানাতে হবে। এতে ডাক্তারদের সময় বাঁচবে, ঘুষ বা উপহারের লেনদেন কমবে এবং ওষুধ কোম্পানিকে সন্তুষ্ট করতে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ প্রেসক্রাইবের প্রবণতা হ্রাস পাবে। পাশাপাশি চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশনে ব্র্যান্ড নামের পরিবর্তে ওষুধের জেনেরিক নাম লিখতে বাধ্য করার সুপারিশও করা হয়েছে, যা ওষুধের খরচ কমিয়ে এনে রোগীদের জন্য চিকিৎসা সাশ্রয়ী করে তুলবে। একই দিন বেলা পৌনে ১২টায় বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কমিশনের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে এসব সুপারিশ বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়।
এই সংস্কারপ্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে এক নতুন যুগের সূচনা হবে। সাধারণ মানুষ আরও সুলভে এবং ন্যায্যভাবে স্বাস্থ্যসেবা পাবে—এমন আশাবাদই প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন দেখার পালা, সরকার কীভাবে এবং কবে এই প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নের পথে এগোয়।
Leave a Reply